ড্যাপ নিয়ে সংকটে আবাসন খাত
দুই লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায়, বাড়ছে দুর্নীতি
জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : রাজধানীর আবাসন শিল্প চরম সংকটের মুখে পড়েছে। মূলত নতুন ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) অনুযায়ী হ্রাসকৃত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) বাস্তবায়নের ফলে জমির মালিক ও আবাসন ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ফলে শুধু আবাসন খাতই নয়, এর সঙ্গে যুক্ত লিংকেজ শিল্পও মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন।
বর্তমানে নির্মাণ কাজ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রি এখন শূন্যের কোটায়। আবাসন শিল্পের সাথে জড়িত ক্রেতারাও কিস্তি পরিশোধ বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে দুই লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। এই সংকটের কারণে অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আবাসন শিল্প সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কারসাজির মাধ্যমে আগের নিয়ম অনুযায়ী নকশা অনুমোদন করে দিচ্ছেন, যা দুর্নীতির অন্যতম প্রমাণ। জমির মালিকদের অভিযোগ, ঘুষ ছাড়া রাজউক থেকে কোনো কাজ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। মাসের পর মাস ঘুরেও নির্মাণ অনুমোদন মিলছে না।
ঢাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক সমিতির সমন্বয়ক প্রফেসর ড. দেওয়ান এম.এ সাজ্জাদ বলেন, "ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশ মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ২০০৮ সালের বিধিমালা অনুযায়ী যেখানে যত তলা ভবন নির্মাণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, নতুন ড্যাপে তার পরিবর্তন হওয়ায় অনেক জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সরকার পরিবর্তনের পর ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও আবাসন ব্যবসায়ীরা মন্ত্রণালয় ও রাজউকের কাছে ড্যাপ সংশোধনের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাজউক সংশোধনের সুপারিশ পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। রাজউক চেয়ারম্যান (অব.) মেজর জেনারেল ছিদ্দিকুর রহমান সরকার জানান, "আমরা রিহ্যাব ফেয়ারে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম, সেই মোতাবেক ড্যাপ সংশোধনের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় সেটি যাচাই-বাছাই করছে।"
তবে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, ড্যাপ সংশোধনের সুপারিশে ১৬ ফিট রাস্তার নিচে যাদের জমি রয়েছে, তাদের জন্য কোনো সুখবর নেই। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা আসতে পারে।
রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ অভিযোগ করেন, "আওয়ামী লীগ সরকারের সময় করা বৈষম্যমূলক ড্যাপ বাস্তবায়নে কিছু অসাধু কর্মকর্তা এখনও সক্রিয়। তারা বিভিন্ন উপায়ে জনগণের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।"
রিহ্যাব পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল ফরহাদ (ফিলিপ) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "ড্যাপ সংশোধন করে ২০০৮ সালের বিধিমালার মতো করতে হবে। তা না হলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব এবং দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।
বর্তমানে নতুন ফ্ল্যাট নির্মাণ স্থবির হয়ে পড়ায় বাজারে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাইরে থাকা অনেক জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ড্যাপ সংশোধন ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ নেই। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আবাসন শিল্প ধসে পড়বে, যা অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
দৈনিক বাংলার গৌরবের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও রাজউকের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তারা জানিয়েছেন, ড্যাপ সংশোধনের বিষয়টি এখন যাচাই-বাছাই চলছে এবং শিগগিরই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জোনায়েদ মানসুর
প্রকাশক কর্তৃক ৮০/১ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২৯২, ভূঁইয়াপাড়া রোড, খিলগাঁও, ঢাকা-১২১৯।
মোবাইল: ০১৭৮৯৪২১৪৪৪, ০১৯১৩৫৫৫৩৭১
ইমেইল : infobanglargourab@gmail.com, pressjonaed@gmail.com (বিজ্ঞাপন),
ওয়েবসাইট : www.banglargourab.com
© All rights reserved 2025 দৈনিক বাংলার গৌরব