নিজস্ব প্রতিবেদক: জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে । গত বছরের শেষ প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ শতাংশ। বর্তমানে জনতা ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭২ শতাংশই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ এখন জনতা ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য মতে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা, যেটা ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬৬ দশমিক ১৫ শতাংশ ছিল।
কিন্তু তিন মাস পর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা, যেটা ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭২ শতাংশ। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। এসব খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণেও পরিণত হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ব্যাংকটির খেলাপি দ্রুত বেড়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। যা আগে নিয়মিত দেখানো হতো।
২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি আননটেক্সের ২২ প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার ৫২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে এসব ঋণ অনুমোদনে ব্যাপক অনিয়ম দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনতা ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেক্সিমকো-এস আলম গ্রুপ ঋণ ফেরত না দেওয়ায় তাদের সব ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২ শতাংশ। আলোচ্য সময় শেষে ব্যাংক খাতের ঋণস্থিতি ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। মূলত, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গোপন রাখা খেলাপির সঠিক তথ্য প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়ার পর এ বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ বেরিয়ে এসেছে।
এর আগে ব্যাংক খাতে সর্বোচ্চ খেলাপি রেকর্ড ছিল সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে। সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। ফলে তিন মাসের ব্যবধানে ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ঋণস্থিতি ছিল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয় ৯ শতাংশ। এরপর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জোনায়েদ মানসুর
প্রকাশক কর্তৃক ৮০/১ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২৯২, ভূঁইয়াপাড়া রোড, খিলগাঁও, ঢাকা-১২১৯।
মোবাইল: ০১৭৮৯৪২১৪৪৪, ০১৯১৩৫৫৫৩৭১
ইমেইল : infobanglargourab@gmail.com, pressjonaed@gmail.com (বিজ্ঞাপন),
ওয়েবসাইট : www.banglargourab.com
© All rights reserved 2025 দৈনিক বাংলার গৌরব