1. pressjonaed@gmail.com : Jonaed Mansur : Jonaed Mansur
  2. admin@banglargourab.com : banglarg :
  3. infobanglargourab@gmail.com : Rumi Jonaed : Rumi Jonaed
চেকের মামলায় টাকা আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া : অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক - দৈনিক বাংলার গৌরব
১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| বসন্তকাল| বৃহস্পতিবার| বিকাল ৪:৫৬|

চেকের মামলায় টাকা আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া : অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

বাংলার গৌরব ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫
  • ৭ টাইম ভিউ

চেক ডিসঅনারের মামলায় জেল খাটলেও কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে হবে। এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় নেই। নতুবা সারাজীবন জেলেই থাকতে হবে। আর বাদীপক্ষ যদি আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী কোন পদক্ষেপ না নেন, সেক্ষেত্রেই আসামী পরবর্তী জেল ও টাকা আদায়ের হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন।

যে আদালত আসামীকে জেল দিয়েছে বাদীপক্ষ অর্থাৎ পাওনাদার ওই আদালতেই ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধান মোতাবেক টাকা আদায়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে আবেদন করতে পারবেন। ৩৮৬ (১) (বি) ধারার বিধান অনুযায়ী আদালত লেভী ওয়ারেন্ট ইস্যু করে তা কার্যকরী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অর্থাৎ ডিসি সাহেবের কাছে প্রেরণ করবেন।

উক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দায়িকের অর্থাৎ আসামীর স্থাবর সম্পত্তি উক্ত লেভী ওয়ারেন্টের তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয়ের উদ্যোগ নেবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যদি বুঝতে পারেন যে, দায়িক পূর্বেই উক্ত স্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রি/বন্ধক রেখেছে তাহলে তিনি উক্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন এবং দায়িকের ঐ সম্পত্তি ব্যতীত অন্য কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি আছে কি না সেই মর্মে অবহিত করতে পাওনাদারকে নির্দেশ দেবেন। যদি দায়িকের অন্য কোন সম্পত্তি পাওয়া যায় তাহলে তিনি সেটা ক্রোক ও বিক্রয় করে ডিক্রিদারেরর টাকা আদায়ের উদ্যোগ নিবেন।

তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, দায়িক যদি মামলা দায়ের হওয়ার আগেই সম্পত্তি বিক্রি করে থাকে তাহলে ঐ ক্রেতার স্বার্থে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। তবে চেকের মামলা চলাকালীন আসামী পাওনাদারকে বঞ্চিত করতে জমি অন্যত্র বিক্রি করলে, সেক্ষেত্রে কিন্তু লেভী ওয়ারেন্টের কার্যক্রম বন্ধ রাখা যাবে না। কারণ তখন ধরে নিতে হবে যে, দায়িক তার নিকট প্রাপ্য টাকা যাতে আদায় না করা যায় সে জন্যই কৌশলে অনুরূপ হস্তান্তর করেছে।

এখানে বলে রাখা দরকার যে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৮৬ (১) (বি) ধারার বিধান মোতাবেক যে লেভী ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়, সেটা মূলতঃ দেওয়ানী আদালতের ডিক্রী হিসাবে গণ্য হয় এবং দেওয়ানী আদালতে ডিক্রী যেভাবে কার্যকর করা যায় একইভাবে সেটা কার্যকর করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করা দরকার যে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট লেভী ওয়ারেন্ট পৌঁছার পর সেটা সরকারী দাবী হিসাবে বিবেচিত হবে এবং তিনি সেটা আদায়ের জন্য ১৯১৩ সালের সরকারী দাবী আদায় আইনের বিধান অনুসরণ করবেন। এ আইনের ১৪ ধারার বিধান মোতাবেক সার্টিফিকেট অফিসার (ক) সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয় করা অথবা বিনা ক্রোকে বিক্রয়ের মাধ্যমে অথবা (খ) যে কোন ডিক্রী ক্রোক করে অথবা (গ) সার্টিফিকেট দেনদারকে গ্রেফতার করে কিংবা সব কয়টি পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে টাকা আদায় করতে পারবেন।

যদি দেনাদারের কোন সম্পত্তি না থাকে তাহলে সরকারী দাবী আদায় আইনের ১৪ ধারার বিধান অবলম্বন করে দেনাদারকে দেওয়ানী কয়েদে আটক রেখে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করবেন।

উচ্চ আদালতের একটি কেস স্টাডি উপস্থাপন করলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে উঠবে। পাবনার জেলা প্রশাসক বিগত ২৮/৮/১৯৯০, ২৭/৯/১৯৯০, ২/১০/১৯৯০ইং ও ৪/১০/১৯৯০ ইং তারিখে বেড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবরে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের নিকট ত্রাণ হিসেবে বিতরণের জন্যে ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছিল।

তৎপর বিগত ৮/১০/১৯৯০ ইং তারিখে বেড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একই উদ্দেশ্যে উক্ত চাল থেকে ২০ মেট্রিক টন চাল বেড়া পৌরসভার কমিশনার আসামি রওশন আলীর বরাবরে বরাদ্দ করলে রওশন আলীর ১১/১০/১৯৯০ ইং তারিখে উক্ত ২০ মেট্রিক টন চাল বেড়া খাদ্য গুদাম থেকে এ শর্তে গ্রহণ করেছিল যে, দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজনের নিকট তিনি মাস্টার রোলের ভিত্তিতে ত্রাণ কর্মকর্তার সম্মুখে তা বিতরণ করবেন এবং বিতরণের একদিনের মধ্যে মাস্টাররোল উপজেলা পরিষদের নিকট জমা দিবেন।

কিন্তু আসামি ১,৯৬,৮০০.০০/- টাকা মূল্যের ২০ মেট্রিক টন চাল তার এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের নিকট বিতরণ না করে আত্মসাৎ করায় তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মকর্তা উক্ত ধারার অপরাধে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র পেশ করেছিল।

উক্ত অভিযোগে আপিলকারী আসামিকে বিভাগীয় বিশেষ বিচারকের আদালতে অভিযুক্ত করা হলে তিনি উক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বিচার প্রার্থনা করায় ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং দলিলপত্র বিবেচনা করে বিভাগীয় বিশেষ বিচারক আপিলকারীকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১৯৪৭ ইং সালের ২নং আইনে ৫(২) ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১,৯৬,৮০০.০০/- টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল।

তদ্বারা সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিলকারী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করেছিল। শুনানি অন্তে হাইকোর্ট বিভাগ আপিলটি ডিসমিস করে দিয়ে বিভাগীয় বিশেষ বিচারককে জরিমানার ১,৯৬,৮০০.০০/- টাকা আপিলকারীর নিকট থেকে আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। (মোঃ রওশন আলী বনাম রাষ্ট্র, ২০০২ বি.এল.ডি. পৃষ্ঠা ৩৩)

এটি স্পষ্টভাবে সকলের বোঝা দরকার যে, ফৌজদারি আদালত কর্তৃক আসামির উপর আরোপিত জরিমানা শারীরিক দণ্ডের পরিবর্তে আর্থিক দণ্ড বিশেষ। সেক্ষেত্রে আসামি জরিমানা প্রদান করার পরিবর্তে তদব্যর্থতায় তার উপর আরোপিত কারাদণ্ড ভোগ করা বেছে নিতে পারে না। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধানানুসারে জরিমানা দেওয়ানি আদালতের ডিক্রির মতো একটি অবশ্য পরিশোধ্য আদেশ বিশেষ। যদি আসামিকে জরিমানা পরিশোধ করার ব্যর্থতার জন্যে স্বেচ্ছায় তদপরিবর্তে তার উপর আরোপিত কারাদণ্ড ভোগ করার সুযোগ প্রদান করা হয় তাহলে জরিমানার উদ্দেশ্যেই ব্যাহত হবে।

ফৌজদারি আদালত কর্তৃক আসামির উপর আরোপিত জরিমানা আর্থিক দণ্ড বিধায় তা সরকারি পাওনা হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারার বিধানানুসারে ও পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে। দুর্নীতির মামলায় আসামিকে তছরুফকৃত মালামালের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ একারণে জরিমানা করা হয় যে তদ্বারা রাষ্ট্রীয় ক্ষতির ক্ষতিপূরণ হতে পারে। যদি তা না করা হয় তাহলে অপরাধীকে তদ্রুপ অপরাধ করতে উৎসাহিত করা হবে।

এরূপভাবে জরিমানা সরকারের পাওনা হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সম্পদের উপর একটি দায় বিশেষ এবং তা তার মৃত্যুর পরও আদায়যোগ্য। শুধুমাত্র যেক্ষেত্রে জরিমানার অর্থ দণ্ডিত ব্যক্তির সম্পদের দ্বারা পরিশোধ করা যায় না সেক্ষেত্রে দণ্ডিত ব্যক্তিকে জরিমানার পরিবর্তে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয় এবং অন্য ক্ষেত্রে নয়।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। ই-মেইল: seraj.pramanik@gmail.com

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

Categories

                       © All rights reserved 2025 দৈনিক বাংলার গৌরব