1. pressjonaed@gmail.com : Jonaed Mansur : Jonaed Mansur
  2. admin@banglargourab.com : banglarg :
  3. infobanglargourab@gmail.com : Rumi Jonaed : Rumi Jonaed
মহান স্বাধীনতার অনন‍্য ইতিহাস বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল:সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী - দৈনিক বাংলার গৌরব
১৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| বর্ষাকাল| বৃহস্পতিবার| রাত ১০:০৫|

মহান স্বাধীনতার অনন‍্য ইতিহাস বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল:সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী

সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৯৬ টাইম ভিউ

সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী: জাতির সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও শোকাহত স্বজন-গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করি।

১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল। পুরো দেশ জ্বলছে আগুনে, চারদিকে শুধু যুদ্ধ আর ধ্বংসের ধ্বনি। পাকিস্তানি সেনারা নির্বিচারে হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে নিরীহ বাঙালিদের। কিন্তু বীর বাঙালিরা সহজে হার মানার পাত্র নয়। মুক্তিযোদ্ধারা বুক চিতিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এমনই এক সময়ে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার দরুয়াতলা গ্রামে এক মহাকাব্যিক যুদ্ধের জন্ম হয়। যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা—সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল।

সেদিন সকাল থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের মন অস্থির। চারদিকে গুঞ্জন, পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ করতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। মোস্তফা কামাল তার দল নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। তার চোখে আগুন, হৃদয়ে প্রতিজ্ঞা— ‘এই মাটিকে শত্রুর হাতে তুলে দেবো না!’

“ভাইয়েরা! আমরা মরতে পারি, কিন্তু পিছু হটবো না। আজকের এই যুদ্ধ আমাদের অস্তিত্বের লড়াই!” তার এই দৃঢ় সংকল্প মুক্তিযোদ্ধাদের মনে সাহস জাগায়। সবাই অস্ত্র হাতে শক্ত করে ধরে অপেক্ষা করতে থাকে শত্রুর আগমনের।

কিছুক্ষণ পরেই চারদিক কেঁপে উঠে গোলাগুলির শব্দে। পাকিস্তানি বাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। তাদের সংখ্যা অনেক বেশি, গোলাবারুদও শক্তিশালী। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা সাহস হারালেন না, পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললেন।

মোস্তফা কামাল সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি জানতেন, এই যুদ্ধ সহজ হবে না। শত্রুরা বৃষ্টির মতো গুলি চালাচ্ছে। একের পর এক মুক্তিযোদ্ধা আহত হচ্ছে, শহিদ হচ্ছে। হঠাৎই মোস্তফা কামাল লক্ষ্য করলেন, তাদের অবস্থান ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। পাকিস্তানি সেনারা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে মুক্তিযোদ্ধাদের।

মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে এবং তাদের পালানোর সুযোগ দিতে, মোস্তফা কামাল একটা দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি চিৎকার করে বললেন— “তোরা সবাই সরে যা! আমি একাই ওদের সামলাবো!” কেউ রাজি হচ্ছিল না, কিন্তু মোস্তফা কামালের দৃঢ় কণ্ঠস্বর তাদের বাধ্য করল। মুক্তিযোদ্ধারা পেছনে সরে গেলো, আর তিনি একাই সামনে এগিয়ে গেলেন।

তিনি একাই একের পর এক গুলি ছুঁড়তে লাগলেন শত্রুদের দিকে। পাকিস্তানি সেনারা হতভম্ব হয়ে গেল—একজন মাত্র সৈনিক কীভাবে এত সাহস নিয়ে লড়তে পারে!

দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধের পর তার গুলির মজুদ শেষ হয়ে আসে। তবু তিনি থামলেন না। তিনি শত্রুদের নজর সরিয়ে রাখতে থাকলেন, যাতে তার সহযোদ্ধারা নিরাপদে সরে যেতে পারে।

হঠাৎ একটি গুলি তার বুকের মধ্যে আঘাত করে! তিনি রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, কিন্তু হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করেন।

শেষ মুহূর্তেও তিনি ফিসফিস করে বললেন— “বাংলাদেশ জিতবেই! আমার রক্ত বৃথা যাবে না!”

তার আত্মত্যাগের ফলে মুক্তিযোদ্ধারা নতুন উদ্যমে শত্রুদের আক্রমণ করে এবং পাকিস্তানি সেনাদের পরাস্ত করে। দরুয়াতলা গ্রাম মুক্ত হয়, কিন্তু এক মহান বীর হারিয়ে যায় চিরতরে। সিপাহী মোস্তফা কামালের এই আত্মত্যাগ শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, পুরো জাতির জন্য এক চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তার সাহস, দেশপ্রেম ও আত্মোৎসর্গ আমাদের হৃদয়ে চিরকাল জ্বলতে থাকবে।

তিনি ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম হাবিবুর রহমান একজন হাবিলদার ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল, মোস্তফা কামাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দারুইন গ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক সশস্ত্র সম্মুখ যুদ্ধে শহিদ হন। তাকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

লেখক : গবেষক

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

Categories

                       © All rights reserved 2025 দৈনিক বাংলার গৌরব