নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে বিভিন্ন সংকট ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানে ব্যাংক খাতের সংস্কার কার্যক্রম শুরু হলেও ব্যাংক খাতের উদ্যোক্তা এবং শীর্ষ নির্বাহীরা মনে করছেন, যে কোনো ধরনের সংস্কারের আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, স্টেকহোল্ডারদের মতামত না নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিলে তা বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
বেসরকারি ব্যাংক শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তার মতে, যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি ব্যাংকগুলিকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তবে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের জন্য একটি বিশেষ ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা যেতে পারে। তবে যদি ওই কমিশনকে যথাযথ ক্ষমতা না দেওয়া হয়, তবে তার কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতের সংস্কারে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপের সফল বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক (বিএবি)-এর চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ব্যাংক খাত সংস্কারে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, কোনো পদক্ষেপ বা নীতিমালা প্রণয়নের পূর্বে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। তিনি বলেন, “আমরা তো স্টেকহোল্ডার, দিনশেষে আমাদেরকেই এসব নীতির বাস্তবায়ন করতে হবে।”
ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্তিশালী ভূমিকার গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। তার মতে, যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ও নিরীক্ষা যথাযথভাবে পরিচালিত হয়, তবে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
এছাড়া, খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন বা ভুল আর্থিক বিবরণী প্রকাশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। তারল্য সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংককে দুই ধাপে পদক্ষেপ নিতে হবে—স্বল্পমেয়াদি সমাধান ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার।
ব্র্যাক ব্যাংকের সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাতের টেকসই ও শক্তিশালী ভিত্তি গড়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর রয়েছে। তিনি মনে করেন, যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক সুস্পষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ করেছে, অতীতে অনেক ব্যাংক রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এসব নীতিমালা উপেক্ষা করেছে, যা আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। তবে বর্তমানে ব্যাংকিং খাত উন্নতির পথে চলছে।
সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতের সংস্কারে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত ও পরামর্শ নেওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তবে সব পক্ষই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন এবং সফলতার জন্য আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন।