শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এসজেআইবিএল) ২০০১ সালের ১০ মে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। ব্যাংকটির নিট মুনাফা, আমানত, রেমিট্যান্স, আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগ সব ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম ব্যাংক ও দেশের সব ব্যাংকগুলোর তালিকায় ৫টি ব্যাংকের মধ্যে একটিতে থাকতে চাই। এজন্য গ্রামের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। সম্প্রতি দৈনিক বাংলার গৌরবকে এমনটি জানিয়েছেন শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ। সাক্ষৎকার নিয়েছেন জোনায়েদ মানসুর

বাংলার গৌরব  : শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান ও টার্গেট জানতে চাচ্ছি।
মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ : দেশের তৃতীয় প্রজন্মের একটি শরীয়াহ্ ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক এটি। গ্রাহকদের অবিচল আস্থা ও সুনামের কারণে এ ব্যাংকের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের টার্গেট ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে থাকা এবং দেশের সব ব্যাংকগুলোর তালিকায় ৫টি ব্যাংকের মধ্যে একটিতে। সেটা প্রায় অর্জনের পথে। কারণ, প্রগতিশীল চিন্তা চেতনা ও আন্তরিক গ্রাহক সেবার কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যে এ ব্যাংকটি একটি সুদৃঢ় অবস্থানে উপনীত হয়েছে। এ ব্যাংক যুগের চাহিদা মোতাবেক নিত্যনতুন প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবাকে মানুষের দোর গোঁড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করছে। আমরা শিল্প ও বাণিজ্যে বড় বিনিয়োগের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগ, নারী উদ্যোক্তা, কৃষি এবং এগ্রো বেইসড ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগের পরিধি বাড়াতে চাই, যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।সব লেনদেন অটোমেশনে করার জন্য কাজ করছি।

বাংলার গৌরব  : ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় কাজ করতে গিয়ে কোনো চাপ বোধ করেন কী না?
মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ : না এখানে কোনো চাপ বোধ করছি না। এমডি হিসেবে আমার সৌভাগ্য হলো, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে একটি আদর্শ পরিচালনা পর্ষদ পেয়েছি। এখানে একক কোন সিদ্ধান্ত চলে না। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তেই সব ধরনের কাজ হয়ে থাকে। তাই আমার কোন বাড়তি চাপ নেই। আমি মনে করি, প্রত্যেকটি ব্যাংকের পরিচালনার জন্য আদর্শ পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় আদর্শ পরিচালনা পর্ষদ সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। পরিচালনা পর্ষদের ওপরও নানা ধরনের চাপ থাকে। আবার পরিচালকদের অনেক ক্ষমতা রয়েছে, এটিও সত্য। তবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নীতির প্রশ্নে আপোষহীন হলে পরিচালকরা কোন সুবিধা চাইতে দ্বিধায় থাকেন। ব্যাংকাররা নিজেই যদি কোন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে চান, তাহলে তো পরিচালকরা সুবিধা নিতে চাইবেন।

বাংলার গৌরব  : শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকে আমানত ও বিনিয়োগ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার কারণ কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ :ব্যাংকটি সবসময় সফলতার সঙ্গে কাজ করে আসছে। এ সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ব্যাংকটি ২০২২ সালেসাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (এসএএফএ) বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চারটি পুরস্কার অর্জন করেছে। আইসিএবির বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে তিনটি পুরস্কার অর্জন করেছে। আইসিএসবি ও আইসিএমএবি থেকে গোল্ড মেডেল পেয়েছে।ইমার্জিং ক্রেডিট লিমিটেড (ইসিআরএল) এর রেটিং এ শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং লং টার্মে এএ+ এবং শর্ট টার্মে এসটি-২ এই রেটিং দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এ ব্যাংকে গ্রাহকদের আমানত ও বিনিয়োগ দুটো-ই অধিকতর নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত।

বাংলার গৌরব  : শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা কেমন?
মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ : ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত সন্তোষজনক। বর্তমানে এই ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা ১২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৩ জন। ২০২৪ সালের প্রথম ২ মাসের আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ ৫ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা ও রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার ২১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বিনিয়োগের পরিমাণ ২৪ হাজার ৫৪৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

বাংলার গৌরব   : আপনাদের কী কী স্কিম ও সেবা রয়েছে?
মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ : সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করা আমরা সব ধরনের আমানতের স্কিম ও  সেবা চালু করেছি। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ইসলামী শরীয়া’র ওয়াকালাহ্ ধারণা অনুসরণ করে চালু করেছে ইসলামী ক্রেডিট কার্ড। রয়েছে চব্বিশ ঘন্টা এটিএম সার্ভিস ও রিয়েল টাইম অন-লাইন ব্যাংকিং। আমাদের রয়েছে এসএমএস পুশ-পুল সার্ভিস, যার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহক তাদের লেনদেনের তথ্য ও ব্যালেন্স জানা যায়। সকল শাখায় রয়েছে অন-লাইন ভিত্তিক ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট করার সুবিধা। একজন গ্রাহক তিতাস গ্যাস, পিডিবি, পল্লী বিদ্যুৎ, ওয়াসা, ডিপিসিডি, ডেসকো এবং বিটিসিএল এর সকল ধরণের ফি ও ট্যাক্স শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের যেকোন শাখার মাধ্যমে জমা দিতে পারেন। সব শাখায় রয়েছে ই-জিপি সার্ভিস। শুধু তাই নয়, ই-জিপি সার্ভিসের সাথে প্রয়োজনীয় আর্নেস্ট মানি সংস্থানের জন্য অত্যন্ত সহজ শর্তে আর্নেস্ট মানি অথবা পে-অর্ডার ফাইন্যান্স স্কীম, যার মাধ্যমে দরদাতাগণ সহজেই টেন্ডার-ডকুমেন্ট দাখিল করতে পারে।যেখানে প্রতিদিন ব্যাংকে আমানত রেখে প্রতিদিন মুনাফা নেয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া টাকা দ্বিগুণ/তিনগুণ বৃদ্ধি করারও স্কিম রয়েছে। মাসিক আমানত, হজ ডিপোজিট, মিলিয়নিয়ার, হাউজিং ডিপোজিট, ক্যাশ ওয়াকফ ডিপোজিট, লাখপতি ডিপোজিট, মোহর ডিপোজিট, শিক্ষা ডিপোজিটসহ বিবাহ ডিপোজিট স্কিম চালু রয়েছে। রয়েছে আমানতকারীদের ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা ।

বাংলার গৌরব   : এসজেআইবিএলের সারা দেশে শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট ও এটিএম বুথের সংখ্যা কত?
মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ : বর্তমানে দেশব্যাপী ১৪০টি শাখা, ৪টি উপশাখা, ১১৫টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্থাপিত হয়েছে ১২০টি এটিএম বুথ।

বাংলার গৌরব   : ব্যাংকিং সেক্টরে দেশের প্রথম গ্রীণ বিল্ডিং সনদ এসজেআইবিএলের এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ : এটা সত্যিই আনন্দের। যে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছে সেটির প্রধান কার্যালয় ইউএসজিবিসি লীড গোল্ড সার্টিফাইড প্রাপ্ত। সবুজ অর্থনীতির জন্য সবুজ ব্যাংকিং যেমনটি করছি। তেমনি আমাদের বিল্ডিংটিও পরিবেশবান্ধব। এটি গুলশান এভিনিউতে ব্যাংকের বেইজমেন্ট-সহ ১৭ তলা বিশিষ্ট একটি নিজস্ব আইকনিক বিল্ডিং রয়েছে, যেখানে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং এই বিল্ডিংটি হচ্ছে ইউএসজিবিসির লীড গোল্ড সার্টিফাইড প্রাপ্ত, যা দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে প্রথম গ্রীণ বিল্ডিং। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) নামের একটি সংস্থা সারা বিশ্বের সবুজ শিল্পের সনদ দিয়ে থাকে।

বাংলার গৌরব  : আপনাদের পরিকল্পনা যদি বলতেন?
মোসলেহ উদ্দীন বলেন : গ্রামের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রান্তিক মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দেয়ার জন্য এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। আমরা চাই, বেশি বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে। এছাড়া ক্ষুদ্রঋণ ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করছি।