চট্টগ্রাম ব্যুরো : অব্যাহত লোকসানের কারণে পুঁজি হারানো আর বকেয়া টাকা ফেরত না পেয়ে বাংলাদেশ সল্ট ক্রাশিং এখন যায় যায় অবস্থা। এর সঙ্গে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ব্যাংকঋণ পরিশোধের তাড়া। অবস্থা এমন যে, কারখানায় নিয়োজিত দুজন ম্যানেজার আর শ্রমিকসহ ৫০ জনের বেতন দিতে প্রতিষ্ঠানটি রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। এত কিছুর পরও শুধু বাপ-দাদার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখা হয়েছে। তাও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
শুধু এই প্রতিষ্ঠান নয়, চট্টগ্রামে এমন অন্তত ৪৫টি লবণ মিল রয়েছে যেগুলো এখন সংকটময় সময় পার করছে। আর লোকসানের ভার বইতে না পেরে দুটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি? দেশের একসময়ের লাভজনক খাত কেন হঠাৎ মুখথুবড়ে পড়ল। বাংলাদেশ সল্ট ক্রাশিং কারখানার মালিক ফয়সাল ইমরান বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। তার ওপর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাকিতে লবণ বিক্রি না করে উপায় থাকে না। কিন্তু ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক ক্রেতা গা ঢাকা দিয়েছেন। ধরা পড়ার ভয়ে অনেকে ব্যাংকে গিয়ে অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না। সব মিলিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। একদিকে ব্যাংকঋণের অর্থ শোধ করতে চাপ দিচ্ছে, অন্যদিকে পুঁজিসংকটে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমি নই, সব মিলারেরই মার্কেটে ৪০ থেকে ৬০ লাখ টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। এই অর্থ আদায় করতে না পেরে ব্যবসা সামলাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। লোকসানের ভার বইতে না পেরে এরই মধ্যে দুটি কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।’
এদিকে লবণ উৎপাদনের মৌসুম শুরু হলেও পুঁজি হারানোর কারণে মিলমালিকদের মুখে হাসি ফুটছে না। গত বছর এক মাসে কেউ মাত্র ২০ দিন, কেউ ২৫ দিন করে মিল চালু রেখেছিলেন। এখন প্রায় সবাই মিল বন্ধ রেখেছেন। বর্তমানে ব্যবসায় চাঙাভাব না থাকায় লবণের পাশাপাশি অন্য কোনো পণ্য নিয়ে ব্যবসার কথা ভাবছেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে লবণ মিলগুলো চাক্তাই, রাজাখাল ও মাঝিরঘাট এলাকায় গড়ে উঠেছে। চাক্তাই ও রাজাখাল এলাকায় অন্তত ১৭টি মিল রয়েছে। এর মধ্যে চাক্তাই এলাকায় দুটি কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। এর একটি হাজি রহমত আলী সল্ট ক্রাশিং, অন্যটি বাগদাদ সল্ট। অন্যদিকে মাঝিরঘাট এলাকায় ৩০টি লবণ মিল রয়েছে। চালু থাকা এসব কারখানাগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
চাক্তাই এলাকার লবণ পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান লাল মিয়া সল্টের মালিক আসাদ আসিফ বলেন, ‘পুঁজিসংকটের কারণে খুবই খারাপ দিন যাচ্ছে। মিলগুলো কাজের গতি হারিয়েছে। কাঁচা লবণ কিনে এনে প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ পড়ে বেশি। কিন্তু ওই লবণের অধিকাংশ বিক্রি করতে হয় বাকিতে। অতীতেও বাকিতে বিক্রি করে অনেকে সে অর্থ আদায় করতে পারেননি। তাই আমরা অল্প পরিমাণে এনে প্রক্রিয়াজাত করছি।’ তিনি বলেন, ‘গত বছর এক বস্তা লবণ (৭৪ কেজি) ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা ছিল। এবার বিক্রি করছি ৬৪০ থেকে ৭১০ টাকায়। এভাবে চলতে থাকলে লবণ মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, ‘লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। আশা করছি এবারও ভালো পরিমাণে লবণ উৎপাদন হবে। অনেকে বাকিতে লবণ বিক্রি করে সে অর্থ আদায় করতে পারেননি। তাই তারা আর্থিক সংকটে পড়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘যদিও সেটা ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু তাদের সচেতন হয়ে ব্যবসা করতে হবে। মিলারদের সংকট নিরসনে আমরা বিসিকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, এ বছর মিলারদের অবস্থা খুব একটা ভালো যাবে না। সূত্র: খবরের কাগজ