নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ছয়টি কোম্পানির অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে দায়ীদের বিষয়ে কোনো কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
মঙ্গলবার রাতে এই প্রতিবেদন কমিশনের কাছে দেওয়া হলেও গতকাল বুধবার ছয় কোম্পানির লেনদেন হয়েছে। তবে বুধবারের লেনদেনে ওই কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি, বরং অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক ছিল লেনদেন।
যে ছয় তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে সেগুলো হলো- বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইসতিসনা, আইএফআইসি গ্রান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড ইস্যুসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি, বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ফরচুন শুজ লিমিটেড ও কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড (পূর্বে পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালারস লিমিটেড)।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, বিগত সময়ের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। ফলে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এখন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থায় এখন কোনো কিছুতে বিনিয়োগকারীরা প্রভাবিত হন না। বরং নিজেরা যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন সেগুলোর শেয়ারদর কেমন, সেটি নিয়ে বেশি ভাবনায় থাকেন। বাজার বিনিয়োগকারীরা বলছেন, তদন্ত প্রতিবেদনে কী আছে সেটিও প্রকাশ করা উচিত। তাহলে পুঁজিবাজারের বর্তমান এই অবস্থার জন্য কারা দায়ী, যেটি দৃশ্যমান হতো।
গতকালের লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফরচুর শুজ কোম্পানির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ২ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছে। আগের দিন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দর ছিল ১৭ টাকা ২০ পয়সা, লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা।
বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ২ দশমিক ৭২ শতাংশ কমেছে। কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে ১৭ টাকা ৯০ পয়সায় নেমেছে। যদিও কোম্পানিটির শেয়ারদর দুই দিন ধরেই কমছে।
বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইসতিসনার শেয়ারদর গতকাল ছিল অপরিবর্তিত, ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও সুকুকটির দিনের সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ৪৭ টাকা।
লেনদেন: সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব মূল্যসূচকের নেতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে টাকার অঙ্কে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ২ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসইর অপর সূচক ‘ডিএসইএস’ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫২ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক দশমিক ৬৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯১৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইতে ৩৯১ কোটি ১৫ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫১৯ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা। ফলে এক দিনের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ১২৮ কোটি টাকা।
এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৩টি কোম্পানির, বিপরীতে ২০৯ কোম্পানির দর কমেছে। পাশাপাশি ৪৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর ছিল অপরিবর্তিত।
অপর পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১১টির এবং ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।