নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো কৃষির ওপর নির্ভর করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু বরাবরের মতোই এবারও অন্যান্য খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়লেও কমেছে কৃষি ঋণ বিতরণ। গেল বন্যার সময় যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বোরো মৌসুমে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন কৃষকরা। এজন্য কৃষি খাতে সহজ শর্তে সুলভ ঋণের প্রবাহ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর উদাসীনতা লক্ষ করা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ কমেছে ১১ শতাংশের বেশি। যদিও একই সময়ে আদায় বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কৃষি খাতে মাত্র ১৬ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই ঋণের পরিমাণ ছিলো ১৮ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এই খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে একই সময়ে কৃষি খাতের ঋণ আদায় বেড়েছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করা ঋণ আদায় করেছে ১৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই আদায়ের পরিমাণ ছিলো ১৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা।
সাম্প্রতিক দুটি বন্যায় কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার নিত্যপণ্যের বাজারেও রয়েছে অস্থিরতা। এ অবস্থায় কৃষি ঋণ বিতরণ কমে আসায় আসন্ন রবি ও বোরো মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক দুটি বন্যা ও এর আগের খরার প্রভাবে এবার আরও বেশি করে কৃষি ঋণ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ বিতরণে জোর না দেয়ায় ঋণ প্রবাহ কমেছে। এতে উৎপাদন কমে খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি সামনের দিনগুলোয় মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা আরো জোরালো হয়ে উঠতে পারে।
কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কমার কারণেও জিডিপিতে কৃষির অবদান কমেছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ২০২৪ সালের শেষার্ধে ব্যাংকসহ পুরো ব্যবসায়ীক কার্যক্রমই ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে পুরো ব্যাংক খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। তাছাড়া পরপর তিনটি বন্যার ফলে কৃষি ঋণ বিতরণ কমে গেছে। বেড়েছে বকেয়ার পরিমাণও।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে বোরো মৌসুমে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ২০২৪ সালের শেষার্ধে দুটি বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি খাতে ঋণের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে, কিন্তু ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কমেছে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ১৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এই ঋণের পরিমাণ ছিলো ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ৬২৩ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অতীতের বন্যার ক্ষতির পরবর্তী উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আরও বেশি ঋণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো কৃষিঋণের প্রতি আন্তরিক না থাকায় ঋণের প্রবাহ কমেছে।