বাংলার গৌরব ডেস্ক: নতুন দল গঠনের আগেই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে। সদস্যসচিব পদ নিয়ে মূলত মতবিরোধ তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের মধ্যে। এ নিয়ে গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। নতুন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার হতে পারে ২০০ জনের। এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে ৭৫ জনের নাম। গত রোববার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ নিয়ে সভা হলেও কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
নাগরিক কমিটির নির্বাহী সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, নতুন দল গঠনে বিভিন্ন কোরামের লোকজন রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটি, সাংবাদিকসহ আন্দোলনে অংশ নেওয়া লোকজন রয়েছেন। সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হবে। কমিটির আকার ২০০ বা ৩০০ জন হতে পারে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপরই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির লক্ষ্যে দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা। উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দিয়ে নাহিদ ইসলাম নিজের সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির ঐক্য ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে গঠন করা হয় লিয়াজোঁ কমিটি। পরে গঠন করা হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই ব্যানারে ডান ও বামপন্থি অনেকেই যোগ দেন, যারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে তারা জনগণের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করেন। এখন চলছে গঠনতন্ত্র-ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ।
তবে দলের নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে মতবিরোধ। আন্দোলনের মুখ হিসেবে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক রাখার পক্ষে একমত সবাই। তবে সদস্যসচিব পদ নিয়ে তৈরি হয়েছে টানাপোড়েন। এই পদে বর্তমান নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত উঠে আসছে। এ নিয়ে করা হচ্ছে জরিপও। গত শনিবার রাত থেকেই আখতার হোসেনকে মাইনাস করা হচ্ছে বলে ফেসবুকে সরব হন তার অনুসারীরা। আবার আন্দোলনে ভূমিকা এবং সাংগঠনিকভাবে অংশগ্রহণ বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আলী আহসান জোনায়েদের পক্ষে তার অনুসারীরা।
যদিও এ নিয়ে নাগরিক কমিটির কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেননি। তবে সংগঠনটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের সদস্যসচিব নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। গত রোববার সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে আলোচনাও করা হয়নি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলা হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে পোস্ট করার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করা হয়।
জানা যায়, আখতার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নফাঁস নিয়ে অনশন করে আলোচনায় আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা ছিলেন। এরপর আলাদা হয়ে গঠন করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, যার আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। জুলাই আন্দোলন চলাকালে টিএসসি থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
সাবেক শিবিরের নেতা-কর্মীদের অভিমত, নতুন দলের প্রধান হিসেবে নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন হলে এটা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কমিটি হবে। কারণ তারা দুজনই সংগঠনটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ছিলেন। ১৭ জুলাইয়ের পর ক্যাম্পাস বন্ধ হলে যাত্রাবাড়ী, চানখাঁরপুলে আন্দোলন পরিচালনায় শিবিরের আলী আহসান জোনায়েদ ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলে পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে ঢাবি শিবিরের নেতা-কর্মীরা ভূমিকা রাখেন। এসব বিবেচনায় সদস্যসচিব পদে তারা নিজেদের কাউকে চাইছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে নাগরিক কমিটিতে যুক্ত আছেন বামপন্থি ছাত্রসংগঠনের সাবেক নেতা-কর্মীরাও। তারা নাগরিক কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চান। অনেকে আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে নেতৃত্বে রাখার পক্ষে। এছাড়া নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদকে শীর্ষ পদগুলোতে রাখার কথা বলছেন অনেকেই।
তবে সদস্যসচিব নিয়ে মতবিরোধ নিরসন না হলে তাদের মধ্যে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। বর্তমানে নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৮৮ জন। গত রোববার সভায় উপস্থিত ছিলেন ১১০ জনের মতো। অনুপস্থিত থাকা নেতারা আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি আলাদাভাবে একটা সভা করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। ব্যাপক মতবিরোধ হলে তারা আলাদা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারেন বলে জানা গেছে।
নতুন দল গঠন নিয়ে শুরুতেই এ ধরনের মতবিরোধে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন অন্য রাজনৈতিক ও ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।