তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় ৪৭ বিলিয়ন ডলার। এই রপ্তানি আয়ের কৃতিত্বের দাবিদার ছোট ও মাঝারি তৈরি পোশাক কারখানাগুলোও। তবে বায়িং হাউজ বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে দেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের মিলিত করে। দেশের রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার এ পোশাক রফতানিতে বড় ভূমিকা রাখছে বায়িং হাউজগুলো। গার্মেন্ট বায়িং হাউজ শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করার সুবিধা (ইউডি) পাই না। তারপরেও টিকে থাকতে হচ্ছে। সহায়তা করছি তৈরি পোশাক রপ্তানিতে। সম্প্রতি দৈনিক বাংলার গৌরবকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কেএফএস ফ্যাশনের (বায়িং হাউজ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ পিন্টু।
বাংলার গৌরব : আগামী বাজেটে আপনাদের প্রত্যাশা কী?
আব্দুল হামিদ পিন্টু : দেশের রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার এ পোশাক রফতানিতে বড় ভূমিকা রাখছে বায়িং হাউজগুলো। গার্মেন্ট বায়িং হাউজ শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করার সুবিধা (ইউডি) পাই না। তারপরেও টিকে থাকতে হচ্ছে। সহায়তা করছি তৈরি পোশাক রপ্তানিতে। অবদান রাখছি দেশের পোশাক খাতের সম্প্রসারণে। আমরা বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকদের যোগসূত্র স্থাপন করি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতটি বাঁচাতে নগদ সহায়তা, উৎসে আয়কর কমানোসহ সরকারের নীতিসহায়তা দরকার। বাজেটে বায়িং হাউজগুলোর অগ্রীম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা এবং নতুন বায়িং হাউজকে তিন বছরের জন্য কর রেয়াতের সুবিধা দাবি করছি।
বাংলার গৌরব: দেশের অর্থনীতি আপনাদের অবদান কেমন?
আব্দুল হামিদ পিন্টু : দেশের অর্থনীতিতে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সদস্যদের ভূমিকা কম নয়। তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় যে ৪৭ বিলিয়ন ডলারের বলা হচ্ছে, এই রপ্তানি আয়ের কৃতিত্বের দাবিদার বিজিএমইএর বাইরে থাকা ওইসব ছোট ছোট কারখানাগুলোও। এ বিষয়টি অনেক কর্তাব্যক্তিরাই মাথায় রাখতে চান না। বায়িং হাউজ বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের মিলিত করে। নিশ্চিত করে রপ্তানি আদেশ। তাই দেশের পোশাক শিল্পে বায়িং হাউজের অবদানও কম নয়। তৈরি পোশাক খাতে যা রপ্তানি হয়, তার অর্ধেক অবদান বায়িং হাউস দাবি রাখে। দেশের রপ্তানি করা পোশাক শিল্পের প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ কার্যাদেশ বা অর্ডার সংগৃহীত ও বাস্তবায়ন হয় এসকল বায়িং হাউসের মাধ্যমে। বায়িং হাউজেকর্মরত মার্চেন্ডাইজার, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজারসহ প্রায় চার লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
বাংলার গৌরব: বায়িং হাউজ পোশাক খাতে কি ধরণের কাজ করে থাকে?
আব্দুল হামিদ পিন্টু : সাধারণত বায়িং হাউজ বিদেশি ক্রেতা বা বায়ারদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে দেয়। দুই পক্ষের যোগসূত্র করিয়ে দিয়ে রফতানি আদেশ নিশ্চিত করে। দেশের সব পোশাক কারখানা তো আর বিজিএমইএর সদস্য নয়। ২০ লাইন বা ২৫ লাইন কিংবা এর চেয়ে কম লাইনের কারখানাগুলো প্রধানত বায়িং হাউজগুলোর উপর নির্ভর করে। তাদের উৎপাদিত তৈরি পোশাক বিদেশের বাজারে রপ্তানি করতে প্রধানত বায়িং হাউজ ছাড়া উপায় নেই। মোট কথা বায়িং হাউজ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারককে বায়ারের সন্ধান দেয়। রপ্তানি আদেশের সন্ধান দেয়। বায়িং হাউজ বিপণনের (মার্কেটিং) কাজটিই করে থাকে। এমন অনেক কারখানাকে টিকিয়ে রেখেছে বায়িং হাউজ। এই বিপণনের কাজটি প্রস্তুতকারকেরাও করতে পারেন এবং করছেনও।
বাংলার গৌরব: কিছু অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়। শিপমেন্টে সমস্যা, পেমেন্ট আটকে যাওয়ার বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
আব্দুল হামিদ পিন্টু : মূল জিনিস হচ্ছে অর্ডার। সেটা মিস বা ক্যান্সেল হলে কারো জন্যই ফলপ্রসু নয়। বায়িং হাইজ এবং ফ্যাক্টরির মধ্যে দায়িত্বের কিছু টানাপোড়ন ঘটে যা অনাকাঙ্ক্ষিত। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি সামাজিক-রাজনৈতিক অনেক কিছুই ঘটে যা অনভিপ্রেত। পাশাপাশি শ্রমিক সংকট, র-মেটেরিয়ালের সংকটসহ বিভিন্ন কারণে সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু যত যাই ঘটুক, মনে রাখতে হবে এক্সপোর্ট করছে কিন্তু ফ্যাক্টরি। বায়িং হাউজ এককভাবে কোনো নির্দিষ্ট সমস্যার জন্য দায়ী নয়। শিপমেন্টের দেরি হলে সেটা সবার জন্যই সমস্যা।
বাংলার গৌরব: বিজিবিএ কবে প্রতিষ্ঠিত ও বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা কেমন?
আব্দুল হামিদ পিন্টু : বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস এসোসিয়েশন ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঠিক ওই বছরই বিজিএমইএ তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় গার্মেন্ট বায়িং হাউজকে তাদের সদস্য করে নেয়ার একটি প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে নানা জটিলতার কারণে বিজিবিএ সরকারি লাইসেন্স পায় ২০০৬ সালে। অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সদস্য রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন।
বাংলার গৌরব : বিজিবিএ ও বিজিএমইএ পার্থক্য কী?
আব্দুল হামিদ পিন্টু : তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। আর বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ)। নামেই বোঝা যাচ্ছে দুটি সংগঠনের কাজের ধরণ একটু আলাদা। তবে একে অপরের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। বিজিএমইএ পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ পাওয়ার ব্যবস্থা করি আমরা।