নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শিল্প, অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থান বাঁচাতে গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ২০ থেকে ২২ টাকা করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বিয়াম সেন্টারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত গণশুনানিতে এ কথা বলেন তিনি।
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগে যে শিল্প এক হাজার কোটি টাকায় চালাতে পারতাম এখন এসে প্রয়োজন ১৭০০ কোটি টাকা। এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে, প্রয়োজন ছিল এক হাজার টাকা, আছে ৭০০ টাকা, এখন প্রয়োজন হচ্ছে ১৭০০ টাকা, আমরা লসে আছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিল্পের স্বার্থে, ইকোনমিকে বাঁচিয়ে রাখা এবং কর্মসংস্থান বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে গ্যাসের দাম ২০ থেকে ২২ টাকার মধ্যে নামিয়ে নিয়ে আসেন। স্বাধীনতার পরে বাজেট ঘোষণা করা হতো ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা। আজ ৮ থেকে ৯ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে পারছি শিল্পের জন্য। ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানোর জন্য হলেও গ্যাসের দাম কমানো উচিত।
গণশুনানিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, সদস্য (অর্থ, প্রশাসন ও আইন) মো. আব্দুর রাজ্জাক, সদস্য (গ্যাস) মো. মিজানুর রহমান, সদস্য পেট্রোলিয়াম ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, সদস্য (বিদ্যুৎ) ব্রিগে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহিদ সারওয়ার উপস্থিত আছেন।
গণশুনানিতে ব্যবসায়ী, শিল্পকারখানার মালিক, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, সাংবাদিক, আইনজীবী, অ্যাক্টিভিস্টসহ অনেকে উপস্থিত আছেন।
এর আগে শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনসহ (পেট্রোবাংলা) দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে গণশুনানি করে বিইআরসি।
চলতি বছরের শুরুতে পাইকারি গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় পেট্রোবাংলা। এরপর তিতাস গ্যাস কোম্পানিসহ সরকারি ছয়টি বিতরণ কোম্পানি খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর আবেদন করে। আবেদনে শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা এবং ক্যাপটিভের দাম ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে জানানো হয়, গ্যাসের দাম বাড়ানো না হলে এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে চলতি বছর সরকারকে বিশাল টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। দেশি গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে আসছে অর্ধেকের মতো। আর ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে জোগান দেওয়া হচ্ছে।
গণশুনানিতে পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানি মূল্য পড়ছে ৬৫ টাকা ৭০ পয়সা। ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্য চার্জ যোগ করলে তা দাঁড়ায় ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা। এজন্য দামের পার্থক্য কমাতে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, দেশি গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ক্রমেই কমে যাওয়ায় শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে সর্বাধিক প্রভাব পড়েছে। চাহিদা মেটাতে দেশি গ্যাসের সঙ্গে ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামীতে এলএনজি আমদানির পরিমাণ আরও বাড়াবে। পেট্রোবাংলার প্রস্তাব পাওয়ার পর বিইআরসির পক্ষ থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে প্রস্তাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কোম্পানিগুলো পেট্রোবাংলার নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রস্তাব জমা দেয়। বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এখন এসব প্রস্তাব মূল্যায়ন করছে।