নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খান মো. নূরুল আমিনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বেআইনি ইজারা বাতিল, মিথ্যা মামলা ও প্রভাব খাটিয়ে পদোন্নতির অভিযোগ উঠেছে। ২০০৪ সালে আশাশুনিতে ইউএনও থাকাকালীন তিনি প্রতাপনগর ইউনিয়নের গড়াইমহল জলমহল ইজারা বেআইনিভাবে বাতিল করেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত দুই ব্যক্তি নূরে আলম সিদ্দিকী ও আব্দুর রশিদ সরকারকে দেড় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৭ অক্টোবর আশাশুনির গড়াইমহল জলমহল ইজারা পান নূরে আলম সিদ্দিকী ও আব্দুর রশিদ মোড়ল। কিন্তু ইউএনও খান মো. নূরুল আমিনের সহযোগিতায় স্থানীয় একটি মহল ইজারা বাতিলের ষড়যন্ত্র করে। বাধ্য হয়ে আব্দুর রশিদ গং আশাশুনি সহকারী জজ আদালতে মামলা (নং ১০৯/২০০৫) দায়ের করেন এবং আদালত বাদীর পক্ষে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
কিন্তু ২০০৬ সালের ১০ মে, মামলার নিষ্পত্তির আগেই ইউএনও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইজারা বাতিল করে দেন। এরপর পরদিন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ লুটপাট করে।
ইজারা বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নং ৫২১১/২০০৬) দায়ের করা হলে আদালত বাতিল আদেশ স্থগিত করেন। পরবর্তীতে হাইকোর্টে ভায়োলেশন মামলা (মিস-১০/২০০৬) দায়ের হলে আদালত ইউএনও খান মো. নূরুল আমিনকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। কারাদণ্ডের রায় গোপন রাখতে ইউএনও বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করান।
২০০৬ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রতাপনগর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীকে দিয়ে নূরে আলম সিদ্দিকী ও আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে সিআর-৪৪৫/২০০৬ নং চাঁদাবাজি মামলা করানো হয়। ২০০৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউএনওর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এসএম আজিজুল হকের মাধ্যমে জিআর-২৯/২০০৭ নং মামলা দায়ের করা হয়। ২০০৭ সালের ৩ এপ্রিল বিসিক লবণ প্রকল্পের ম্যানেজার আব্দুস সালামের মাধ্যমে জিআর-৬০/২০০৭ নং মামলা করিয়ে তাদের এলাকা ছাড়া করা হয়।
আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এসব মামলার বাদীরা স্বীকার করেন, তারা ইউএনও নূরুল আমিনের নির্দেশে চাকরি রক্ষার স্বার্থে মিথ্যা মামলা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারাদণ্ডের আদেশ থাকা সত্ত্বেও খান মো. নূরুল আমিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী সচিব হন। সম্প্রতি তিনি (অতিরিক্ত) সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে (পি আর এল) এ গেছেন। তার রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আমরা এতদিন সাহস করে অভিযোগ করতে পারিনি। আমরা এখন সরকারের কাছে আমাদের ক্ষতিপূরণ চাই এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাই।
নূরে আলম সিদ্দিকী ও আব্দুর রশিদ মোড়ল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করে দেড় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। একইসঙ্গে অভিযুক্ত ইউএনও’র বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাবেক ইউএনও ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সহকারী (ডেপুটি) সচিব খান মো. নূরুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে তার মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এখন প্রশ্ন হলো, সরকার কি এই প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, নাকি ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হবে।