1. pressjonaed@gmail.com : Jonaed Mansur : Jonaed Mansur
  2. admin@banglargourab.com : banglarg :
  3. infobanglargourab@gmail.com : Rumi Jonaed : Rumi Jonaed
লোকসানি এক্সচেঞ্জ হাউজ দেখার নামে আইএফআইসি বোর্ডের লন্ডন বিলাস ! - দৈনিক বাংলার গৌরব
১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| বসন্তকাল| শনিবার| রাত ১:২৩|

লোকসানি এক্সচেঞ্জ হাউজ দেখার নামে আইএফআইসি বোর্ডের লন্ডন বিলাস !

নিউজ সোর্স
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৯ টাইম ভিউ

বাংলার গৌরব ডেস্ক: লোকসানে ডুবছে আইএফআইসি মানি ট্রান্সফার (ইউকে) লিমিটেড। গত বছর ৯ মাসে এক্সচেঞ্জ হাউজটি লোকসান করে আড়াই কোটি টাকার বেশি। অথচ এ লোকসানি এক্সচেঞ্জ হাউজ দেখার নামে লন্ডনে আট দিনের বিলাস ভ্রমণে যাচ্ছে আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড। এজন্য ব্যাংকের অর্থে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করবেন আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পাঁচ পরিচালক ও কোম্পানি সচিব। যদিও চেয়ারম্যানসহ চার পরিচালকই ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার নন।

এদিকে লন্ডনে যাওয়া-আসা ও থাকাকালীন আট দিনের জন্য তারা নেবেন মোটা অঙ্কের টিএ/ডিএ বিল। এভাবেই প্রায় ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় করবেন আইএফআইসির পরিচালনা বোর্ড। যদিও ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এক্সচেঞ্জ হাউসটির জন্য নিয়মিতই লোকসান গুনতে হচ্ছে আইএফআইসি ব্যাংককে। সূত্র মতে, গত ৮ জানুয়ারি আইএফআইসি ব্যাংকের ৯০৬তম বোর্ড সভায় লন্ডন এক্সচেঞ্জ হাউজ পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। অথচ গত বছর শেষ ৯ মাসে (এপ্রিল-ডিসেম্বর) আইএফআইসি মানি ট্রান্সফার (ইউকে) লিমিটেড ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৯৬ পাউন্ড লোকসান করেছে। বাংলাদেশি টাকায় প্রতি পাউন্ড ১৫১ টাকা দরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
সূত্রমতে, চলতি মাসে এক্সচেঞ্জ হাউসটি দেখতে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করবেন আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেন, পরিচালক মো. এবতাদুল ইসলাম, সাজ্জাদ জহির, কাজী মো. মাহবুব কাশেম, মো. গোলাম মোস্তফা ও মো. মনজুরুল হক। এদের মধ্যে চেয়ারম্যানসহ প্রথম চারজনই ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার নন। আর বাকি দুই পরিচালক সরকারের প্রতিনিধি।

লন্ডন বিলাসে প্রত্যেকের জন্য বিমান ভাড়ায় ব্যয় হচ্ছে চার লাখ ৪৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ পরিচালনা পর্ষদের ছয়জনের জন্য বিমান ভাড়াতে ব্যাংকের ব্যয় হবে ২৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এছাড়া কোম্পানি সচিব মোকাম্মেল হকের বিমান ভাড়াও ব্যাংক বহন করবে।
ব্যাংক সূত্রে আরও জানা গেছে, যাওয়া-আসা ও লন্ডনে ছয়দিন অবস্থানসহ মোট আট দিনের জন্য টিএ/ডিএ ভাতা নিচ্ছেন চেয়ারম্যান ও পাঁচ পরিচালক। চেয়ারম্যান প্রতিদিনের জন্য টিএ/ডিএ ভাতা নেবেন এক হাজার ১০০ ডলার করে। অর্থাৎ আট দিনে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মেহমুদ হোসেন টিএ/ডিএ বিল নিবেন ৮ হাজার ৮০০ ডলার। আর প্রত্যেক পরিচালক প্রতিদিনের জন্য ৮৫০ ডলার করে টিএ/ডিএ ভাতা নেবেন। এতে প্রত্যেক পরিচালক টিএ/ডিএ বিল নেবেন ছয় হাজার ৮০০ ডলার করে।

চেয়ারম্যান ও পাঁচ পরিচালক মিলে মোট টিএ/ডিএ বিল নেবেন ৪২ হাজার ৮০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলার ১২২ টাকা দরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫২ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা। এতে বিমান ভাড়া ও টিএ/ডিএ বিল মিলিয়েই ব্যয় হচ্ছে ৭৮ লাখ ৯৭ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া কোম্পানি সচিবও ব্যাংকের নির্ধারিত হারে আট দিনের জন্য টিএ/ডিএ বিল নেবেন। এ বিষয়ে জানতে আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহমুদ হোসেনের সঙ্গে এই প্রতিবেদক একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাকে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি এবং হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তার কোনো উত্তর দেননি তিনি। এছাড়া গত দুই দিন আইআফআইসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় গেলেও চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডিদের বিদেশ ভ্রমণে শিথিলতা আনা হয়েছে। এজন্য এখন কোনো ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যান বিদেশ ট্যুরে গেলে তাদের ব্যয়ের হিসাব কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে জানতে পারে না। তবে ভ্রমণ শেষে ফিরে আসার পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হিসাব দিতে হবে। যদি আইএফআইসি ব্যাংকের বোর্ড লন্ডন ট্যুরে বেশি অর্থ ব্যয় করে তখন আমরা জবাদিহিতার আওতায় আনতে পারব।
আইএফআইসি মানি ট্রান্সফারের (ইউকে) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির আয় হয় ৩০ হাজার ২৯৫ পাউন্ড। আর ওই প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির খরচ হয়েছে ৯৯ হাজার ১৭৩ পাউন্ড। অর্থাৎ গত বছর শেষ প্রান্তিকেই আইএফআইসি মানি ট্রান্সফারের লোকসান হয়েছে ৬৮ হাজার ৮৭৮ পাউন্ড। বাংলাদেশি টাকায় প্রতি পাউন্ড ১৫১ টাকা ধরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৪ লাখ টাকা।

এর আগের প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আইএফআইসি মানি ট্রান্সফারের (ইউকে) লোকসান হয়েছে ৬৪ হাজার ৮২২ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ আসে ৯৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আয় হয়েছিল ২৬ হাজার ৭৬০ পাউন্ড। আর এই প্রান্তিকে ব্যয় হয়েছিল ৯১ হাজার ৫৮২ পাউন্ড। এছাড়া গত বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছিল ৪১ হাজার ৮৯৬ পাউন্ড। জুন প্রান্তিকে আয় হয়েছিল ৭০ হাজার ৬৯৯ পাউন্ড এবং ব্যয় হয়েছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৫৯৫ পাউন্ড।
সব মিলিয়ে গত বছর (এপ্রিল-ডিসেম্বর) ৯ মাসে আইএফআইসি মানি ট্রান্সফার আয় করে এক লাখ ২৭ হাজার ৭৫৪ পাউন্ড। আর ৯ মাসে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল তিন লাখ তিন হাজার ৩৫০ পাউন্ড। এতে ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান দাঁড়ায় এক লাখ ৭৫ হাজার ৫৯৬ পাউন্ড বা প্রায় ২ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এরপরও এক্সচেঞ্জ হাউজটি দেখতে যাওয়ার নামে ব্যাংকের অর্থ অপচয় বলে মনে করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এ প্রসঙ্গে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও মুখপাত্র মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বুক ক্লোজিং না হওয়ায় ইউকে মানি এক্সচেঞ্জের ২০২৪ সালের তথ্য এখনও আমাদের হাতে আসেনি। বর্তমান বোর্ড লন্ডন ট্যুরে না যাওয়ার বিষয়ে সবরকম চেষ্টা করেছেন। এজন্য লন্ডনে আমাদের কাউন্টার পার্টির সঙ্গে ইতোমধ্যে জুমে তিনটি মিটিং সম্পন্ন হয়েছে। তবে ইউকে সরকারের রেগুলেশন অনুযায়ী, ‘মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন’ শীর্ষক একটি ট্রেনিংয়ে বোর্ডকে উপস্থিত থাকতে হবে। আর এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকলে সেখানে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করেও দিতে পারে।’ প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক আদেশে আইএফআইসি ব্যাংকের পুরোনো পর্ষদ বাতিল করে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়। এতে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এবং শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের প্রভাব থেকে মুক্ত হয় আইএফআইসি। যদিও নতুন পর্ষদ নিজের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ব্যাংকটি পরিচালনা করছেন।

নতুন পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক (নন শেয়ারহোল্ডার) করা হয় ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবতাদুল ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ জহির ও চার্টার্ড অ্যাকাউটেন্ট কাজী মাহবুব কাশেমকে। এর মধ্যে মেহমুদ হোসেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে ব্যাংকটিতে ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সরকারি শেয়ার থাকায় সরকারের দুজন প্রতিনিধি পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা এবং অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মুহাম্মাদ মনজুরুল হককে সরকার মনোনীত প্রতিনিধি পরিচালক করা হয়। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে করা একাধিক মামলায় আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান শেয়ারহোল্ডার সালমান এফ রহমান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার ছেলে শায়ান ফজলুর রহমান আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক সপ্তাহ পর ১৩ আগস্ট আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক পদ হারান ঋণ খেলাপি হওয়ায়। সূত্র: শেয়ার বিজ

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

Categories

                       © All rights reserved 2025 দৈনিক বাংলার গৌরব